মো:আবু তালেব,রংপুর বিভাগীয় প্রধান:
নীলফামারীতে বাল্যবিবাহর মতো স্পর্শকাতর সামাজিক অপরাধ ঠেকাতে গিয়ে নীলফামারীতে চরম হেনস্তা ও শারীরিক হামলার শিকার হয়েছেন একাধিক গণমাধ্যমকর্মী।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল (মঙ্গলবার, ৮ জুলাই) নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জঙ্গলীপাড়া গ্রামে।
সূত্র মতে, গত ৬ জুলাই ওই এলাকায় হরেন রায়ের ছেলে নিপেনের আশীর্বাদ অনুষ্ঠানের সময় হঠাৎ এক নাবালিকা প্রেমিকার পরিচয়ে সেখানে হাজির হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়ের পক্ষ অনুষ্ঠান থেকে সরে যায়।
তিন দিন ধরে মেয়েটি এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থান করছিল। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান নীলফামারী জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি স্বপ্না আক্তার স্বর্ণালি শাহ, গ্লোবাল টিভির জেলা প্রতিনিধি সোহেল রানা এবং স্বদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি নুরুল আমিন।
সাংবাদিকরা সরেজমিন তদন্ত করে দেখতে পান, ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির কোনো স্থায়ী সম্পর্ক নেই এবং বিষয়টি শুধুমাত্র মোবাইল ম্যাসেজ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল। এরপরও মেয়েটিকে পাশের একটি বাড়িতে পাঠানো হয়, যেখানে সে আশ্রয় নিতে গেলে গৃহকর্তা তাকে রাখতে অস্বীকৃতি জানান।
সাংবাদিক স্বপ্না শাহ বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অবহিত করেন। সন্ধ্যার পর সাংবাদিকদের একাধিকবার যোগাযোগের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য জগদীশের বাড়িতে মেয়েটিকে নিয়ে যান কিছু স্থানীয় বাসিন্দা।
তবে এখানেই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান সাংবাদিক স্বপ্না শাহকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ ও পেশাগত হুমকি দেন। তার সঙ্গেই থাকা শ্যামল রায় (নীরেন্দ্রনাথ রায়ের পুত্র) গ্লোবাল টিভির সাংবাদিক সোহেল রানার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন এবং স্বর্ণালি শাহের গলার সোনার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন।
পরে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান ইসলাম কালু, সাংবাদিক স্বর্ণালির মা ও জেলা মহিলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসরীন আক্তার এবং জেলা এনপিসির সমন্বয়ক আক্তারুজ্জামান খান তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।
এ ঘটনায় স্বর্ণালির স্বামী ও গ্লোবাল টিভির জেলা প্রতিনিধি সোহেল রানা বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এমআর সাঈদ বলেন,
“অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, “এলাকায় যারা একটু ভালো অবস্থানে আছেন, তাদের নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে হয়রানি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। বিভাগীয় তদন্ত হলে সব কিছুই বেরিয়ে আসবে।”
এই ঘটনায় নীলফামারী জেলায় সাংবাদিক মহলসহ সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।