
রেদওয়ান সাগর, জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষ (সম্মান) ‘বি’ ইউনিট (সমাজবিজ্ঞান অনুষদ) ও ‘ই’ ইউনিট (বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির হাতে নিয়েছে বহুমুখী উদ্যোগ।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ সংলগ্ন অমর একুশের পার্শ্ববর্তী জায়গায় তাদের এডমিশন টেস্ট হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়। দিনব্যাপী পরিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সহযোগিতামূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনটি কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে গত শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরিক্ষার মতো এবারও জাবি ইসলামী ছাত্রশিবির পক্ষ থেকে দুটি তথ্য কেন্দ্র এবং দুটি অভিভাবক লাউঞ্জ রয়েছে। এসব হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার্থী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের তথ্যগত সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবায় প্রাথমিক ফার্স্ট এইড সেবা পাচ্ছে, পাশাপাশি আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর অবস্থান সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে কলম, বুকমার্ক ও পানি বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা হিসেবে মোবাইল ফোন চার্জিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং শিক্ষা উপকরণ হিসেবে বুকমার্ক, স্টিকার ও কলম বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের সংগঠন সম্পর্কে জানার জন্য অর্ধশত বই ও পরিচিতির ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এসময় ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী নিলীমা সামিয়া বলেন, ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আমরা যারা নতুন শিক্ষার্থী এখানে পরীক্ষা দিতে এসেছি, তাদের জন্য নানা ধরনের তথ্য ও দিকনির্দেশনার মাধ্যমে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হচ্ছে, যা আমাদের জন্য খুবই উপকারী। এর ফলে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সহজে বুঝতে পারছি এবং নির্বিঘ্নে পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছি।
এছাড়া সামিয়া বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন আমাদের অভিভাবকদের জন্য বসে বিশ্রাম নেওয়ার সুবিধা রাখা হয়েছে, পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে স্টিকার, বই ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্যসহ নানা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, যা আমাদের জন্য সত্যিই অনেক উপকারে এসেছে।
ভর্তি পরিক্ষা সহায়তা কেন্দ্রে চট্টগ্রাম থেকে উপস্থিত হওয়া অভিভাবক জামাল উদ্দীন খান বলেন, আমার সন্তানকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর উদ্দেশ্যে জাবি শিবিরের কাছে এসেছিলাম। সেখানে এসে দেখেছি, তারা আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত সম্মানজনক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেছে। আমরা যারা পরীক্ষার্থীর অভিভাবক ছিলাম, সবাইকে তারা নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
তাদের আচরণ ও দায়িত্বশীলতা দেখে মনে হয়েছে ভবিষ্যতে তারা নিশ্চয়ই আরও ভালো ও ইতিবাচক কাজ করবে। ডাকসু–জাকসু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডও চোখে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য যে সেবাগুলো তারা দিচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমার পক্ষ থেকে তাদের জন্য শুভকামনা।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অসংখ্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আমাদের এই সেবাগুলো গ্রহণ করছেন এবং তারা সন্তোষ প্রকাশ করছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের স্থাপিত টেন্টের মূল উদ্দেশ্য হলো ভর্তি পরীক্ষায় আগত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহযোগিতা প্রদান করা। এখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভবন সম্পর্কে তথ্য, কোন ভবনে বা কোন স্থানে তাদের সিট পড়েছে – এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা সহজেই জানতে পারছে। এতে করে বিভ্রান্তি কমছে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে পারছে।
সহযোগিতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে জাবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫তম ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা গতকাল থেকে শুরু হয়ে ৩১ তারিখ পর্যন্ত চলবে।এই সময়ে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ইনফরমেশন বুথ ও গার্ডিয়ান লাউঞ্জ চালু রাখা হয়েছে। এখানে প্রয়োজনীয় তথ্য সহায়তার পাশাপাশি কলম, বুকমার্ক ও পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ফার্স্ট এইড সেবাও প্রদান করা হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারছে। আমরা আশা করি, এই সেবাগুলো পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে সহায়ক হবে।
আমাদের জন্য এটি একটি ব্যস্ত কিন্তু আনন্দদায়ক সময়, এবং এই সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পেরেছি বলে, তিনি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন।