
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন সীমান্তঘেঁষা এলাকায় একসময় পহেলা বৈশাখ ও ডিসেম্বর মাস এলেই রঙিন উৎসবের আবহ তৈরি হতো। হিন্দু সম্প্রদায়ের পাথরকালি পূজা উপলক্ষে ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে বসত ব্যতিক্রমী এক মিলনমেলা। দুই দেশের মানুষ—আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব—হাত ধরে দেখা করত, খোলামেলা আলাপ হতো, ভাগাভাগি হতো হাসি-আনন্দ আর স্মৃতির ঝাঁপি।
সেই মেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনন্য মানবিক সম্পর্ক। দুই দেশের সীমান্তবাসী একে অপরকে আপনজন হিসেবে কাছে টানত। স্থানীয় কৃষিপণ্য, পোশাক, মিষ্টান্ন থেকে শুরু করে নানা জিনিসপত্রের আদান–প্রদানে মুখর হয়ে উঠত মেলার পরিবেশ। সীমান্তে থাকা তারকাটা বেড়া পেরিয়েও হৃদয়ের সংযোগ ছিল অকৃত্রিম—এক সেতুবন্ধন, যা রাজনীতির সীমানাকে ভুলিয়ে দিত।
কিন্তু গত প্রায় সাত বছর ধরে সবকিছু বদলে গেছে। দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারকরণসহ নানা কারণে আর বসছে না সেই মিলনমেলা। যে স্থানে একসময় মানুষের ভিড়ে সরগরম হতো সীমান্ত এলাকা, আজ সেখানে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। স্থানীয়রা বলছেন, এই মিলনমেলা শুধু উৎসব নয়—এটি ছিল দুই দেশের সীমান্তবাসীর সম্পর্কের প্রতীক। তার অনুপস্থিতি যেন এক মানসিক দূরত্ব তৈরি করেছে।
সীমান্তবাসীদের অনেকে আশা করছেন, একদিন আবার খুলে যাবে সেই পুরোনো দরজা। পাথরকালি পূজাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মানুষ আবারও সীমান্ত পেরিয়ে মিলিত হবে। ফিরে আসবে উৎসবের রঙ, আলিঙ্গনে মিলবে দুই দেশের মানুষের হাসি, আবেগ আর পারিবারিক বন্ধনের শক্ত সেতু।
সীমান্তের মানুষের সেই অপেক্ষা এখনো জারি আছে—মানবিক সম্পর্কের মিলনমেলা আবার ফিরে আসার প্রত্যাশায়।