
মোঃ আমিনুর রহমান দুলাল, ডিমলা উপজেলা প্রতিনিধি:
নীলফামারী ডিমলায় ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে আসা পানির কারনে রবিবার বিকাল থেকে তিস্তার পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, সন্ধ্যা ৭ টায় তিস্তার ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তার উজানের তিস্তা বিধৌত ৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে বসত বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে কয়েক হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ে । বন্যা কবলিত ইউনিয়ন গুলো হল, পশ্চিম ছাতনাই,পূর্ব ছাতনাই, খগা খড়িবাড়ি টেপাখড়িবাড়ি, গয়া বাড়ি, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী।
বন্যা কবলিত ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কবলিত হয় প: ছাতানাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জে এলাকা। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ টি বাঁধটি পানির স্রোতের তোড়ে বাধটি ভেঙ্গে তিস্তা নদীর গর্ভে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ইমারজেন্সি ওয়ার্কের আওতায় জিও ব্যাগে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে ভাঙ্গন রোধ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোববার দিবাগত রাতভর সেখানে অবস্থান করে বাধ রক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। পাশাপাশি তাদের সার্বিক সহায়তা করেন উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, ও এন সি পি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গত রোববার বিকেল থেকে উপজেলা প্রশাসনের ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীগন বন্যা কবলিত এলাকায় অবস্থান করে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করে চলছে।
রোববার বিকেল থেকে তিস্তার উজান ভারত থেকে আকস্মিকভাবে পানি ঢুকে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ তিস্তা ব্যারেজর সবগুলো জল কপাট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ভাইপাস সড়ক কেটে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন । এসময় তিস্তা ব্যারেজের উজানের বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করে দেয়া হয়। এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে রেড এলার্ট জারি করেন। বিপদের আশঙ্কায় ওই সাতটি ইউনিয়নের তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা গৃহপালিত গরু,ছাগল ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় ও আসবাবপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে দেখা যায়।
রোববার রাত ১২টার পর থেকে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু হয়ে গিয়েছে তিস্তা ব্যারেজের বিপদ সীমার ১৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হতে থাকে। পানি কমার সাথে সাথে তিস্তার উজানের তিস্তা বিধৌত এলাকাগুলোতে ভাঙ্গনের দেখা দিয়েছে। সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই সকল ভাঙ্গন কবলিত এলাকা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছে।
পানি কমতে শুরু করার সাথে সাথে, টেপা খড়িবাড়ি ইউনিয়নের বার্নির ঘাটের স্পার বাধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রাণপণে চেষ্টা করছে ভাঙ্গন রোধের ।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো,ছালামত ফকির জানান, রোববার বিকেল থেকে বিকেল থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকলে আমাদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্ক করে দেয়া হয় এবং তিস্তা অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, তিস্তানদীতে পানি বাড়ার সতর্ক বার্তা পাওয়ার পরই, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পাঠাই এবং তদারকির বাধ রক্ষা সহ তিস্তা বাসীদের নিরাপদে যাওয়ার জন্য সকল প্রকার কার্যকরী ভূমিকা রাখার জন্য বলি। আমিও রোববার সন্ধ্যা থেকে নিরবিচ্ছন্নভাবে সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙ্গন রোধে ইমারজেন্সি ওয়ার্কের আওতায় জরুরী ভাবে বালুভর্তি বস্তা ফেলার নির্দেশ দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো, ইমরানুজ্জামান জানান, রোববার সন্ধ্যা থেকে তিস্তা নদী এলাকায় অবস্থান করছি। পানি কমতে শুরু করায় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে সবকিছু। প,ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জের বন্যা নিয়ন্ত্রণ টি বাঁধ এলাকায় গিয়ে তিস্তার পানির প্রবাহ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল নিমিষেই বুঝি সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তিনি সবকিছু রক্ষা করেছেন।