আনিছুর রহমান, নিজস্ব (প্রতিবেদক) চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম: বাঁশখালী সাধনপুর ইউনিয়নে দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের মালিকানাধীন বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের শতাধিক গাছ প্রকাশ্যে কেটে লুটপাট ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের এক চরম ন্যক্কারজনক অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হলো—স্থানীয় রামদাস মুন্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত সদস্যদের উপস্থিতিতেই এই জঘন্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র দাবি করছে।
জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান-এর স্ত্রী দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ ও বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ ইং তারিখ দুপুরবেলা, বাঁশখালীর বাণীগ্রাম পূর্ব বৈলগাঁও (১নং ওয়ার্ড) পৃর্বে পাহাড়ি এলাকায় তাঁদের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে এই অপরাধ সংঘটিত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , চিহ্নিত দুর্বৃত্ত মোঃ মিজান মোল্লা (২নং ওয়ার্ড, মৃত আন্নর আলীর পুত্র, চিহ্নিত সন্ত্রাসী) এবং কামাল উদ্দিন (মৃত নছিম আলীর পুত্র, একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি) সহ অন্যান্যরা এই লুটপাটে নেতৃত্ব দেয় এবং লক্ষাধিক টাকা মূল্যের শতাধিক গাছ প্রকাশ্যে কেটে নিয়ে যায়।
স্থানীয়দের মূল অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু হলো— রামদাস মুন্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের উপস্থিতিতেই এই লুটপাট হয়েছে। সচেতন মহল এই ঘটনাকে দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্পত্তির উপর চরম অবমাননা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামদাশ হাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (তখন বাকচি) জানান, “অভিযুক্তরা সংখ্যায় বেশি ছিল।” অন্যদিকে, বাঁশখালী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, “পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে নয়। বরং পুলিশ সদস্যরাই কেটে ফেলা গাছগুলো উদ্ধার করে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় রাখেন।”
তবে স্থানীয়রা পুলিশের এই বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে দাবি করছেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা বা পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ঘটনা ঘটতে পারত না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও বৈলগাঁও ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আন্নর আলীর পুত্র মিজান মোল্লা এবং একই গ্রামের মৃত নছিম আলীর পুত্র কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বেই এ বৃক্ষনিধন হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে জায়গা দখল ও গাছ কাটাসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তারা স্থানীয়দের ভয়ভীতি ও মামলার হুমকি দিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা ও অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত অভিযুক্তদের হামলার ভয়ে এলাকার সচেতন নাগরিকরা মুখ খুলতে সাহস পান না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ও স্থানীয়রা জানিয়েছে এ ঘটনায় সাক্ষীদের ‘ঘুমখুনের’ হুমকি প্রদান করা হচ্ছে, যা এলাকায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিরল এই বৃক্ষনিধনের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।
গাছ কেটে ফেলার এই অপরাধকে কেবল ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি হিসেবে দেখছেন না সচেতন মহল; এটিকে পরিবেশের উপর চরম আঘাত এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের শামিল বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমে ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়ার পরও থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এই কঠিন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির প্রতি চরম অবিচার বলে মনে করা হচ্ছে।
জনস্বার্থ, পরিবেশ রক্ষা এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে, ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ প্রশাসনকে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দ্রুত ও কঠোরতম পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের প্রধান দাবিগুলো হলো:
১. চিহ্নিত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গাছ কাটার অপরাধ আইন এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আইনে অবিলম্বে ও কঠোরতম আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা । এবং
২. লুট হয়ে যাওয়া কেটে ফেলা গাছগুলো দ্রুত উদ্ধার করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা ।
এই পরিস্থিতিতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ একান্ত কাম্য। এলাকাবাসী আশা প্রকাশ করেন, অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে এলাকায় বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত এড়ানো সম্ভব হবে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।
Like this:
Like Loading...
Related