
মোঃমামুন হোসেন,আশুলিয়া প্রতিনিধিঃ
সাভারের একটি অভিজাত রিসোর্টে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে – এমন তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা নজরদারি, রিসোর্টের রেজিস্টার এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় এই তথ্য নিশ্চিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ভোর ৫টা ২৩ মিনিট থেকে সকাল ৮টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত সাভার থানাধীন মধুমতি মডেল টাউন এলাকায় যমুনা ন্যাচারাল পার্ক সংলগ্ন গ্রিন জোন রিসোর্টের ২০৪ নম্বর কক্ষে সন্দেহজনক এই বৈঠক চলে। তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, নির্ধারিত সময়জুড়ে ওই কক্ষে সংঘটিত কর্মকাণ্ড সাধারণ কোনো অবস্থান ছিল না।
তদন্তে উঠে এসেছে, ১২ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে মিরপুরের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন রিসোর্টের নাইট ডিউটিতে থাকা কর্মচারী হাবিবুর রহমান সিয়াম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কক্ষটি বুকিং দেন। গভীর রাতে বুকিং, ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রাখা এবং রেফারেন্স ব্যবহার – সব মিলিয়ে শুরু থেকেই বিষয়টি সন্দেহজনক বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
রিসোর্টের সংরক্ষিত রেজিস্টার ও সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, রাত ৪টা ৮ মিনিটে আলমগীরের পরিচয়ে দুজন নারী প্রথমে কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে সকাল ৫টা ২৫ মিনিটে আলমগীর হোসেন আরও একজন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে ওই কক্ষে যান। প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় কক্ষে অবস্থানের পর সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে চারজন একসঙ্গে রিসোর্ট ত্যাগ করেন।
পরবর্তী গোয়েন্দা অনুসন্ধানে আরও গুরুতর তথ্য সামনে আসে। বৈঠকে উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন শরিফ ওসমান হাদীর কথিত শুটার হিসেবে পরিচিত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। তার সঙ্গে ছিলেন বান্ধবী মারিয়া, আলমগীর হোসেন ও আরও একজন সহযোগী। তদন্ত সংস্থার দাবি, এই বৈঠকেই হাদীকে হত্যার পরিকল্পনার মূল ছক চূড়ান্ত করা হয়।
ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে গ্রিন জোন রিসোর্টের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ফুটেজ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ১৩ ডিসেম্বর র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল অভিযান চালিয়ে মারিয়াকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুরো বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।
এ ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রিন জোন রিসোর্টে গিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন ও তল্লাশি চালান। রিসোর্টের রুম সার্ভিস কর্মী হাবিবুর রহমান সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিসোর্টের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম।
তবে এই হত্যাচক্রান্তের সঙ্গে জড়িত কথিত মূল শুটার দাউদ খানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এখনো পলাতক রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এটি কেবল ব্যক্তিগত বিরোধের ফল নয়; বরং এর পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র, অর্থের উৎস ও সম্ভাব্য মদদদাতা সক্রিয় রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, গ্রিন জোন রিসোর্টের বৈঠকটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। নেপথ্যে থাকা যোগাযোগ ও সংশ্লিষ্টদের শনাক্তে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে, এবং শিগগিরই আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ পেতে পারে।